মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধিঃ
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ঐতিহাসিক পুকুরটি লিজ প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক এই পুকুরের নামেই মিঠাপুকুর নামকরণ করা হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই উপজেলা মিঠাপুকুরের প্রশাসনিক দপ্তর ও থানার পাশেই পুকুরটি অবস্থিত।
প্রায় ৩০ বিঘা আয়তনের পুকুরটি প্রতি বছর টেন্ডারের মাধ্যমে ১ বছরের জন্য লিজ প্রদান করা হয়। তবে চলতি বছরে একাধিকবার টেন্ডার দিয়ে সেটি লিজ প্রদান করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মাস খানেক পরে টেন্ডার ছাড়াই কম মূল্যে পুকুরটি লিজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে লিজ গ্রহীতা ও লিজ গ্রহনে আগ্রহী দু'গ্রুপের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। রহিদুল ইসলাম নামে একজন লিজ গ্রহীতার অংশিদার আহত হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিঠাপুকুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অধীনে ঐতিহাসিক পুকুরটি রয়েছে। প্রতিবছর স্কুল কমিটি নিয়মনীতি মেনে পুকুরটি লিজ দেন। চলতি বাংলা সনে ১ বছরের জায়গায় ৩ বছরের জন্য পুকুরটি লিজ দেওয়া হয়েছে। ইউএনও, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ৩ সদস্যের কমিটি পুকুরটি লিজ দেন। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, শেষ পর্যন্ত পুকুরটি গোপনে লিজ দেওয়াকে কেন্দ্র করে।
জানা গেছে, প্রায় ৪ মাস আগে পুকুরটি লিজ দিতে মাইকিং করা হলে ৮/১০ জন সিডিউল ক্রয় করেন। এভাবে আরো কয়েকবার টেন্ডার দিলেও কেউ লিজ ডাকে অংশ নেননি। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের হস্তক্ষেপে সেটি ১৪ লাখ টাকা লিজ প্রদানের মিমাংসা হয়। কিন্তু উপজেলা নির্বাহি অফিসার ১৮ লাখ টাকার নিচে লিজ প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে মাত্র ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় পুকুরটি ৩ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। স্থানীয় রাছিউল করীম রুমন , সাইফুল ইসলাম ও রহিদুল ইসলাম পুকুরটি লিজ গ্রহন করেন।
লিজ গ্রহীতা রাছিউল করীম রুমন বলেন, আমরা নিয়মানুযায়ি লিজ গ্রহন করেছি। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের চুক্তিপত্রও করে দিয়েছে।
পুকুরটি লিজ নিতে আগ্রহী রাসেল মিয়া বলেন, আমরা পুকুরটি লিজ নিতে একাধিকবার সিডিউল ক্রয় করি। কিন্তু শেষে আমাদের না জানিয়ে গোপনে লিজের কার্যক্রম শেষ করে ৩ জনের নামে পুকুরটি লিজ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইউএনও নিজেই বলেছিলেন ওনার কাছে ১৮ লাখ টাকার লিজ নিতে আগ্রহী লোক আছে। তাহলে ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় লিজ দেওয়া হলো কেন? ভিতরে অবশ্যই রফাদফা করেই পুকুরটি লিজ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, উন্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে পুকুর লিজ দেওয়া হোক। মিলন মিয়া নামে স্থানীয় একজন বলেন, যেখানে ১৮ লাখ টাকার নিচে ইউএনও পুকুরটি লিজ দিবেনা। পরে ১৪ লাখ ৭৫ টাকায় কিভাবে লিজ দিল? নিশ্চয় এখানে গোপন লেনদেন হয়েছে।
মিঠাপুকুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জান্নাত আরা ফেরদৌস বলেন, আমরা কয়েকদফা মাইকিং করে লিজ প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু কেউ লিজ ডাকে অংশ নেননি। পরে ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় লিজ দেওয়া হয়েছে। এখন অনেকে এরচেয়েও বেশি মুল্যে লিজ গ্রহন করতে চাচ্ছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মিঠাপুকুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, লিজের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ভাল বলতে পারবেন। লিজ প্রদান সংক্রান্ত কোন কাগজপত্রে আমি স্বাক্ষর করিনি।