পাঠকের মতামতঃ
সাম্প্রতিক ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করা সহ নানান কারচুপির দায়ে জেলা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারদের চাকুরি থেকে অপসারণের পর থানার ওসি-দের অপসারণের কাজ প্রক্রিয়াধীন নিয়ে কিছু কথা লিখছি।
প্রথমেই বলতে চাই নির্বাচন আয়োজন, প্রার্থী যাচাই-বাছাই, প্রার্থীতা বাতিল, অযোগ্য প্রার্থীকে বৈধ করা, যোগ্য প্রার্থীকে অযোগ্য করা, ভোটকেন্দ্রে ভোট কারচুপি ইত্যাদি সব কিছুই করে থাকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কর্মকর্তা বলতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রিজাইডিং অফিসারগণকেই বুঝায়। জেলা পুলিশ সুপারগণ জেলা প্রশাসক সাহেবদের সহায়ক শক্তি ও ভাগবাটোয়ারার অংশীদার তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বেচারা থানার ওসি সাহেবেরা পেশা দারিত্বে পুলিশ সুপারদের নির্দেশে ভোট কেন্দ্রে পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করে নির্বাচনী পরিবেশ ও শান্তি শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করে মাত্র।
মূল কথা হলো ভোট কারচুপিতে ওসি সাহেবদের কোন হাত নেই, কারণ ওসি সাহেবদের ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত থাকারই সুযোগ নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অপকর্ম করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। যেমন প্রার্থী বাছাইয়ে যোগ্যকে অযোগ্য, আবার অযোগ্যকে যোগ্য ঘোষণা, অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র সমূহে প্রার্থীদের চাহিদা মতে পছন্দের প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ, প্রিজাইডিং অফিসারদের ভোট কারচুপিতে এমনকি ভোটের ফলাফল পরিবর্তনেও ইন্ধন বা সাহস প্রদান ইত্যাদি। সুতরাং ওসি বা মাঠ পর্যায়ের পুলিশের ভোট কারচুপিতে তেমন কোন সুযোগ নেই বললেই চলে।
হ্যা নির্বাচনে প্রার্থীর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল বা দাবিয়ে রাখতে গ্রেপ্তার, নির্যাতনে ওসিদের যে হাত নেই তা বলবো না। তবে সেক্ষেত্রে সব ওসিরাই যে এমন কাজে জড়িত তা নয়। অনেক ওসি একাজে জড়িত তা অস্বীকার করা যাবে না। এই চরিত্রে সেই সব ওসিদের সাথে কতিপয় এসআই/এএসআই সাহেবরাও জড়িত।
এইসব এসআই/এএসআই সাহেবরা ছাত্রলীগের ক্যাডার কিংবা ক্ষমতাসীন সরকারের দোসর তাই। সারা দেশের থানা সমূহের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সেইসব কুখ্যাত অফিসারদেক ভালো করেই চিনেন ও জানেন। তাই সেইসব কুখ্যাত ওসি/ এসআই/এএসআই দেক সনাক্ত করে শুধু চাকরিচ্যুত কেন অপরাধ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন প্রয়োগ করতে বাঁধা কোথায়!?
মাথা ব্যথায় মাথা কেটে ফেলা কি যথার্থ? নিশ্চই না। রোগ নির্ণয় করে ওষুধ প্রয়োগে তার প্রতিকার করাই সঠিক। তেমনি কতিপয় ক্যাডার, লুচ্চা ও দলকানা অফিসারদের কারণে সকল ওসিদেরকে চাকরি হতে অপসারণ আদৌ ঠিক? একজনের অপরাধের জন্য অন্যজন কেন শাস্তি পাবে? অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যারা ভোট কারচুপিতে জড়িত তাদের বিষয়ে চুপ কেন? ভোট কারচুপির দায়ে ওসিদেরকে অপসারণে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের হাত জড়িত। তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের পাশ কাটিয়ে পুলিশের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলতে পারে।
তাই আমার মতামত দেশের আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে এবং নিরপরাধ ওসিদের ঢালাও চাকুরি হতে অপসারণ না করে দায়ি ওসি/এসআই/এএসআইদের তথা সর্বস্তরের পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি করছি।
নইলে কতিপয় অপরাধীর সাথে বিএনপি আমলে নিয়োগকৃত নিরপরাধ ওসিরা অপসারিত হলে স্বৈরাচার কর্তৃক নিয়োগকৃত ছাত্রলীগের ক্যাডার পুলিশদের হবে পোয়া বারো।
মতামত-
শফিকুল ইসলাম সাজু
স্যোসাল এ্যাক্টিভিস্ট।
মিঠাপুকুরের কন্ঠ/এডমিন/মার্চ-২০২৫