এম কন্ঠ ডেস্ক্:
শুরু থেকেই চারুকলার শোভাযাত্রাটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল না। আগে এর নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। সেই সময়ের সংবাদপত্র থেকে এমনটাই নিশ্চিত হওয়া যায়। জানা যায়, শুরুর দিকে এ আয়োজনের নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’য় বদলে যায়।
বর্ষবরণ উপলক্ষে ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় প্রথমবারের মতো আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হলেও এর ইতিহাস আরও কয়েক বছরের পুরানো।
সংবাদপত্র থেকে যতটা ধারণা পাওয়া যায়, ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এ আনন্দ শোভাযাত্রার নাম দেওয়া হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যযন্ত্রসহ আরও অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরে শোভাযাত্রা আলোড়ন তৈরি করে। পরবর্তীতে যশোরের সেই শোভাযাত্রার আদলেই ঢাকার চারুকলা থেকে শুরু হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।
এরপর ধীরে ধীরে এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হয় ২০১৪ সালে। বাংলাদেশের দেখাদেখি কলকাতাতেও ২০১৭ সাল থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে শুরু হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাপীঠ ময়দানে গিয়ে শেষ হয় এ শোভাযাত্রা।
জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’-কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এ শোভাযাত্রার নাম নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। অনেকেই মনে করেন, ‘মঙ্গল’ শব্দটি জুড়ে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সংস্কৃতির প্রতি পক্ষপাত করা হয়েছে। ২০২৩ সালে ৯ এপ্রিল একজন আইনজীবী মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশ দেন। তিনি ‘মঙ্গল’ শব্দটি একটি ধর্মীয় সংশ্লিষ্ট শব্দ এবং বৃহৎ আকৃতির পাখি, মাছ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার দাবি করেন।
এরপর ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ও পলায়নের পর নতুন করে আবার আলোচনায় এলো এ শোভাযাত্রা। এ বছর থেকে এটি আবারও ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামেই করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম বদল প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখ বলছেন, এটিকে তারা নাম পরিবর্তন বলতে চান না। তারা বলছেন, নাম পুনরুদ্ধার।
পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদ্যাপনের বিভিন্ন দিক জানাতে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
চারুকলা অনুষদের ডিন বলেন, ১৯৮৯ সালে যখন তারা শিক্ষার্থী ছিলেন, তখন এর নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। পরবর্তী সময় এটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবে পরিবর্তন হয়। ইতিহাসে দেখা যাবে, ১৯৮৯ সালে যে আয়োজনটি হয়েছিল, সেটির স্বতঃস্ফূর্ততা কতটুকু ছিল। আর পরবর্তীকালে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র সময়ে কী ঘটে।
আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘এ কারণে আমরা পরিবর্তন বলছি না। বলছি, আমরা পুনরুদ্ধার করেছি সেই আনন্দ শোভাযাত্রাকে।’ সুত্র: সময়ের আলো