আমিরুল কবির সুজন.
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রাম। এই গ্রামের কৃষকরা ধান, গম, ভুট্টা, শসা, কাকরুলসহ অন্যান্য শাকসবজি আবাদ করেন। তবে এ গ্রামের কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি আবাদ করেন করলা।
গ্রামের প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই করলার আবাদের সাথে জড়িত। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী পাইকান গ্রামের কৃষকরাও করলার চাষাবাদ করেন। তবে নয়াপাড়া গ্রাম করলা বিচির কারণে দেশজুড়ে দিন দিন পরিচিতি লাভ করছে। কারণ এখানকার করলার বীজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে এখানকার করলা বীজ কিনে নিয়ে যায়। চলতি মৌসুমে এখান থেকে কমপক্ষে অর্ধ কোটি টাকার করলার বীজ বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা গতবারের তুলনায় বেশি। কৃষি অফিসের তথ্য বলছে করলা একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার আর রানীপুকুরের করলা বীজের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
করলা বিজ শুকানো হচ্ছে…….
সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে করলার আবাদ করেছেন কৃষকরা। জায়গীর বাসস্ট্যান্ড হতে রানীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদগামী রাস্তার দু পাশে বসে কাজ করছেন কৃষক ও কৃষাণীরা। জমি থেকে পরিপক্ক করলা তুলে এনে সেগুলো থেকে বীজ (বিচি) বের করা হচ্ছে। বীজগুলো ধুয়ে রাস্তার পাশেই শুকানো হচ্ছে পরম যত্নে। করলার অপ্রয়োজনীয় ছাল বা খোসাগুলো ফেলে দেওয়া হয়। করলার খোসা তেতো হওয়ায় সেগুলো গোখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায় না। বর্তমান আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সমন্বয়ে করলার এই ফেলে দেওয়া খোসা কোন কাজে লাগানো যায় কিনা তা নিয়ে গবেষণার দাবি কৃষকদের।
নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আল আমিন বলেন, আমি পেশায় একজন অটোচালক পাশাপাশি প্রতিবছর করলাসহ অন্যান্য শাকসবজি আবাদ করি। কৃষি কাজের ফাঁকে সকাল-বিকেল অটো চালাই সবমিলিয়ে বেশ ভালোই চলে। আমি এবার এক বিঘা জমিতে করলার আবাদ করেছি আশা করছি কমপক্ষে ২ মণ বীজ পাব। প্রতি মণ বীজের বর্তমান মূল্য প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এবার মণ প্রতি দশ থেকে বারো হাজার টাকা দাম বাড়তে পারে । সব মিলিয়ে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকার করলার বীজ বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।
একই গ্রামের কৃষক ফখরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতিবছর করলা আবাদ করি, পাশাপাশি শসা, ধান, গম, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করি। এবার দুই বিঘা জমিতে করলার আবাদ করেছি। আশা করছি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। এখানকার উৎপাদিত করলা সবজির থেকে বীজ হিসেবে বেশি বিক্রি হয়। আমাদের গ্রামে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কেউ না কেউ করলার আবাদ করে। এবার প্রায় ১‘শ একর জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। সবমিলে এবার কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার ব্যবসা হবে। করলা আবাদ করে আমাদের গ্রামের অনেকেই স্বাবল¤ী^ হয়েছেন। কিন্তু করলার বিচি বের করার পর খোসাগুলো অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যায় না । করলার খোসা নিয়ে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে গবেষনার করার জন্য উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মনে করি।
উপসহকারী কৃষি অফিসার মুশফিকুর রহমান বলেন, এখানকার উৎপাদিত করলা বীজ রানীপুকুরের করলা বীজ হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে। প্রতিবছর দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এখান থেকে বীজ নিয়ে যায়। তারা বীজ উৎপাদন করতে পারেনা এজন্য এখানকার করলা বীজের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল আবেদীন বলেন, রানীপুকুরের করলা বীজ বিভিন্ন কোম্পানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা ক্রয় করে। করলার উচ্ছিষ্ট অংশ জৈব সার হিসেবে ব্যবহারের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জৈব সার ব্যবহাররের জন্য প্রতিটি বাড়িতে জৈব প্লান স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে আসছি।
এম কন্ঠ/এস
Leave a Reply