অনলাইন ডেস্ক:
“ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আমার সোনা মেয়েটা বলে গেল, ‘মা স্কুলে গেলাম, টা টা।’ কে জানত এটাই ছিল সায়মার শেষকথা।” বলেই জ্ঞান হারান রিনা বেগম। গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সায়মা আক্তার (৯)।
সে গাজীপুর মহানগরীর বিপ্রোবর্থা এলাকার রিনা বেগম ও শাহ আলম দম্পতির সন্তান। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে ছোট ছিল সায়মা।
আজ মঙ্গলবার সকালে বিপ্রোবর্থা গিয়ে দেখা যায়, পুরো এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দূর থেকে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে শুধুই কান্নার আওয়াজ।
সায়মার বাড়িতে আঙিনায় চলছে কবর তৈরির কাজ। বাড়ির ভেতর উঠান ভর্তি লোকজন। স্বজনদের কেউ কেউ কাঁদছেন। বিলাপ করে কেউ করছেন আহাজারি।
বারান্দায় মেয়ের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছেন বাকরুদ্ধ মা রিনা বেগম। মাছে মধ্যে টপ টপ করে পানি ঝরছে চোখ দিয়ে। এক পর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে দেন তিনি। তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে দেখা গেছে অনেককে।
শান্ত হলে বলেন, ‘বাড়ি গাজীপুর মহানগরীর সালনার বিপ্রোবর্থা হলেও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার জন্য উত্তরায় থাকতাম। দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে সাব্বির হোসেন একই স্কুল থেকে এবছর এসএসসি পাস করেছে। মেয়ে সায়মা ছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। স্বপ্ন ছিল মানুষের সেবা করতে মেয়েকে ডাক্তারি পড়াবেন।
ব্যবসার কাজে সোমবার ব্যস্ত ছিলাম। এক বন্ধু দুপুরে ফোন করে জানায় স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে। দৌড়ে স্কুলে গিয়ে খুঁজে মেয়েকে পাইনি। এ হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছুটেছি। হন্যে হয়ে খুঁজেও পাইনি। মধ্যরাতে সিএমএস থেকে ফোন পেয়ে মেয়ের নিথর দেহ এনে গ্রামে ফিরি। আগের রাতে বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিল মেয়ে। ঘুমানোর আগে কত যে চুমু দিয়েছে। কে জানতো এটাই শেষ ছিল।’
এলাকার বাসিন্দা মো. আতাউর রহমান জানান, সকাল ১১টায় জানাজা শেষে সায়মাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যু শুধু তার পরিবারকেই নয়, কাঁদিয়ে তুলেছে পুরো গ্রামকে। হাসিমুখের সেই ছোট্ট শিশুকে হারিয়ে শোকে হতবিহ্বল এলাকাবাসী।
এম কন্ঠ/এস/২০২৫
Leave a Reply