অনলাইন ডেস্ক:
প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীদের হাত ধরে দরজায় অপেক্ষারত বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দিতেন উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মেহেরীন চৌধুরী (৪৬)। বিমান বিধ্বস্তের সময় তিনি দূরে ছিলেন। আগুন দেখে ছুটে এসে শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীকে একাই বের করে নিয়ে আসেন এই শিক্ষিকা। এতে তাঁর শরীর পুরোটাই পুড়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়ে মারা গেছেন জীবনদায়ী এই শিক্ষিকা। গত সোমবার রাতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মাহরিন চৌধুরীর ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী এক ফেসবুক পোস্টে বোনের মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে লেখেন, মাহরিন আপু আর আমাদের মাঝে নেই। আমার বড় বোন, যিনি আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন। মাইলস্টোনে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করতেন মাহরিন। আগুন লাগার পর তিনি প্রথমে বের হয়ে আসেননি, বরং যতজন শিক্ষার্থীকে সম্ভব বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ১০০ শতাংশ দগ্ধ হন। মুনাফ চৌধুরী লেখেন, আজ আপনারা দয়া করে আমার প্রিয় বোনের জন্য দোয়া করবেন। তিনি তার দুই ছেলেকে রেখে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের সামনে বিমানবাহিনীর একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ওই সময় স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের হাত ধরে গেট পার করানো ছিল মাহরিন চৌধুরীর (৪২) নিত্যদিনের দায়িত্ব। আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে গেলেও তিনি নিজে বেরিয়ে আসার আগে যতজন শিক্ষার্থীকে সম্ভব, তাদের বের করে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান। এ সময় তার শরীর আগুনে দগ্ধ হয়।
মাহরিনের স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, মাহরিনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব ঝলসে গেছে। ডাক্তার শুরুতে বলেছিলেন কমপক্ষে ৮০ শতাংশ বার্ন, তবে আমার মনে হচ্ছে ১০০ শতাংশ দগ্ধ।
লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে স্বামীর সঙ্গে একটু কথা বলেন মাহরিন। এ বিষয়ে মনসুর হেলাল বলেন, মাহরিন বলেছেন- স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিলেন। ঠিক তখনই গেটের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। নিজে দগ্ধ হলেও সেসময় তিনি বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার মুহূর্তে দ্রুত শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম থেকে বের করে আনেন শিক্ষিকা মাহরিন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের বের করে দিয়ে নিজেই যথাসময়ে বের হতে পারেননি।
শিক্ষিকা মাহরিনকে উদ্ধার করা এক মাইলস্টোন ছাত্রীর বাবা নিশ্চিত করে বলেন, ম্যাডাম অনেক ভালো ছিল। সেনাবাহিনী আমাদের বলেছে, শিক্ষিকার জন্য অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী বেঁচে গেছেন।
উদ্ধার হওয়া চতুর্থ শ্রেণীপড়ুয়া ছোঁয়ার মামা জানান, খালি চুল পরে থাকতে দেখেছি। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি, এক ম্যাডাম ছোঁয়াকে উদ্ধার করে বাইরে বের করে দিয়েছে।
এম কন্ঠ/এস
Leave a Reply