
স্টাফ রিপোর্টারঃ
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নে অসুস্থ গরুর মাংস থেকে অ্যানথ্রাক্সের উপস্বর্গ পাওয়া গেছে। ওই গরুর মাংস ও সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির নমূনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ এসেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে ওই অসুস্থ গরুর মাংস সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠালে অ্যানথ্রাক্স সনাক্ত হয়। পরবর্তীতে সেই গরুটি প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠানো হলে ১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ রেজাল্ট আসে। এছাড়াও এক নারীও অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের এক চিকিৎসক।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অ্যানথ্রাক্স মোকাবেলা ও সতর্কতা সৃস্টির লক্ষ্যে ডাঃ মেহেদী হাসান তুষারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত ও উপস্বর্গের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের রহমতপুর বাজারে প্রায় ২০ দিন আগে একটি অসুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করা হয়। এর এক সপ্তাহ পর ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর ও দুর্গাপুর গ্রামের বেশকয়েকজন নারী-পুরুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপস্বর্গ দেখা দেখা যায়। পরবর্তীতে এক ক্রেতার বাড়ির ফ্রিজ থেকে ওই অসুস্থ গরুর মাংস সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে ঢাকা আইইডিসিআর এ পাঠানো হলে অ্যানথ্রাক্স পাওয়া যায়। পরে ওই গরুটি প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও এক গৃহীনির নমূনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠানো হলে তাদের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মিঠাপুকুর উপজেলায় এ পর্যন্ত ৭ জন অ্যানথ্রাক্স উপস্বর্গের রোগী পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৫ জনের নমূনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠানো হলে ১ জনের অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ এসেছে। এক নারী গৃহিনী তিনিও অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত। উপস্বর্গ থাকা রোগীদের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা চলছে।
ইমাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে সচেতনতার পাশাপাশি বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইউপি সদস্যদের নেতৃত্বে ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে প্রাণিসম্পদ দপ্তরেরে প্রতিনিধি রয়েছে। গঠিত কমিটি গরু জবাই করার পূর্বে যাচাই-বাছাই করবেন গরুটি সুস্থ রয়েছে কিনা? এবং দিনেরবেলা জনসাধারণের সামনে সুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করছেন গঠিত কমিটির সদস্যরা। এ ছাড়াও মাত্র ৮০ পয়সায় গবাদিপশুকে টিকা দেয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডাঃ এম এ হালিম লাবলু জানান, মিঠাপুকুরে এ পর্যন্ত ৭ জনের অ্যানথ্রাক্স উপস্বর্গ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১ জন পুরুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স পাওয়া গেছে। এছাড়াও এক গৃহীনির অ্যানথ্রাক্স উপস্বর্গ রয়েছে। আমরা আপাতত দুজন অ্যানথ্রাক্স পজেটিভ মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, ভালভাবে সিদ্ধ করে মাংস খেতে হবে। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মানুষের শরীরে এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া। এ জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগকে গরু-ছাগলের প্রতিষেধক টিকা কাযক্রম জোরদার করতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞরা মিঠাপুকুরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা পীরগাছায় ৮ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত শনাক্ত করেছেন।
এম কন্ঠ/ এস
Leave a Reply