
অনলাইন ডেস্ক:
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের মেষ্টা গ্রামে বাদশা মিয়া। স্থানীয় লোকজন ভালোবেসে তাঁকে ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে ডাকেন। তাঁর পেশা দিনমজুরি হলেও নেশা গাছ লাগানো। নিজের টাকায় রাস্তার পাশে, হাটবাজার ও গ্রামের মোড়ে, ঈদগাহ, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে ২০ বছর ধরে গাছের চারা লাগিয়ে চলেছেন তিনি। এখন তাঁর লাগানো গাছের ফল খান এলাকার মানুষ। গাছের ছায়ায় বসে মনপ্রাণ জুড়ায় পথচারীরা।
ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন বলেন, কটুকথায় বাদশা থামেননি। সবাইকে বুঝিয়েছেন গাছের উপকারিতার কথা। এখন সবাই তাঁর সুফল ভোগ করছে।
মেষ্টা গ্রামের ফসলি মাঠের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে শানেরহাট-বড়দরগা পিচঢালা সড়ক। সড়কের দুই পাশে সারি সারি নানা ফলের গাছ। সেই পথ ধরে বাদশার বাড়িতে ঢুকেই মন জুড়িয়ে যায়। গাছে গাছে সাজানো লম্বা পথ পেরিয়ে তারপর আধা পাকা টিনশেড বাড়ি। পথের দুই পাশে সবজি, ফল আর ফুলের গাছ। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বড়দরগা–শানেরহাট সড়কে নিয়ে গেলেন। দেখালেন, দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিজের লাগানো গাছ। গাছের নিচে নিজের হাতে স্থাপন করা একটি বাঁশের বেঞ্চে বসে শোনালেন গাছ লাগানোর গল্প।
কৃষকের সন্তান বাদশা মিয়া আর্থিক অনটনে লেখাপড়া করতে পারেননি। সাত বছর বয়সে তিনি মাঠে ছাগল, গরু চরানোর কাজ শুরু করেন। একটু বড় হওয়ার পর পেশা দাঁড়ায় দিনমজুরি। সংসারে তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। কৃষিজমি নেই। চার শতক জমির ওপর তাঁর বাড়ি।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে শুক্রবার এলেই ৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়া বাইসাইকেলের পেছনে গাছের চারা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ইউনিয়নের যেকোনো মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের পর গাছের উপকারিতা সম্পর্কে লোকজনকে ধারণা দেন। গাছের চারা উপহার দিয়ে গাছ লাগানোরও পরামর্শ দেন।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে গত বছরের ২৭ অক্টোবর বৃক্ষমেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাদশাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ ধরনের ভালো কাজে এগিয়ে আসায় বাদশাকে আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম।
বাদশা মিয়া নিজের লাগানো গাছ থেকে লাভবান হওয়ার কোনো চিন্তা করেন না ।তবে চান, তাঁর কাজের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম উপলব্ধি করবে, সমাজ ও পরিবেশের জন্য কিছু একটা রেখে যেতে হয়। তিনি বলেন, ‘গাছ অক্সিজেন দিয়ে প্রতিমুহূর্ত আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। আল্লাহ তাআলা যত দিন সুযোগ দেবেন, তত দিন গাছ লাগাব। আমি বেঁচে না থাকলেও আমার গাছ বেঁচে থাকবে। মানুষকে ছায়া, ফল দেবে। তাতেই আমার সুখ।’
এমকন্ঠ/এস
Leave a Reply