1. mithapukur24barta@gmail.com : Mithapukur : Mithapukur
  2. admin@mithapukurerkantho.com : মিঠাপুকুরের কন্ঠ :
মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ১০:২৮ অপরাহ্ন

আগের দিন রাতে দোকানে গোলাগুলি পরে ডেকে নিয়ে নৃশংস হত্যা

  • প্রকাশিত : শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
  • ২৮ বার পাঠ করা হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট:
বৈদ্যুতিক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই এলাকায় বিদ্যুতের তামার তার ও সাদা তারের ব্যবসার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এর নিয়ন্ত্রণ ছিল সোহাগ ওরফে লাল চাঁদের কাছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তা নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া ছিলেন মাহমুদুল হাসান মহিন ও সারোয়ার হোসেন টিটু নামে আরও দুজন। তারা ওই বাণিজ্যের ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলেন। এর জেরেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরই জেরে প্রকাশ্যে ইট-পাথর মেরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী সোহাগকে। এ ঘটনায় মাহমুদুল হাসান মাহিন ও তারেক রহমান রবিনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া মহিন, টিটুসহ অভিযুক্তরা যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। গত বুধবার পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলে কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফটকে এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চলে। প্রকাশ্যে এমন হত্যাযজ্ঞে সোহাগকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ।

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের দুটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে দেখা যায়, মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের ভেতরে এক যুবকের অর্ধমৃত দেহ পড়ে আছে। পাঁচ-ছয়জন যুবক তার শরীরে একের পর এক ইট-পাথর মেরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করছেন। এরপর সেই যুবকের রক্তাক্ত দেহ ফটকের ভেতর থেকে টেনে বের করে মাঝ রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন দুই যুবক। কালো প্যান্ট পরা খালি গায়ের এক তরুণ তার গালে চড় মারছেন। কালো গেঞ্জি পরা আরেকজন এসে ওই ব্যক্তির বুকের ওপর লাফাচ্ছেন। আর এ ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখছে অর্ধশতাধিক মানুষ। কিন্তু এগিয়ে যায়নি।

ঘটনার দুই দিন পর সেখানে গিয়ে স্থানীদের ও পরিবার সূত্রে জানা গেল, ব্যবসার ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগকে। তিনি মিটফোর্ড রোডের ৪ নম্বর রজনী বোস লেনের ভাঙারিপট্টির সোহানা মেটালের মালিক। তিনি অ্যালুমিনিয়াম সিট, তামা, পিতল, দস্তা, শিসা, কাস্টিং কেনাবেচা করেন। এই ব্যবসা নিয়েই পূর্বপরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই দ্বন্দ্ব মীমাংসা করতে বুধবার বিকালে সোহাগকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়।

নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম জানান, কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন সোহাগ। অনেক বছর ধরেই ওই এলাকায় ব্যবসা করছিলেন। চার-পাঁচ বছর আগে তিনি ওই দোকান নিয়ে নিজে ব্যবসা শুরু করেন। কয়েক মাস ধরে তার ব্যবসায় একজন সহযোগী নেন। সর্বশেষ কিছুদিন ধরে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মহিন। সোহাগ তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে তাকে গত তিন-চার দিন হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। হত্যার আগের দিন রাতে তার দোকানে গুলাগুলিও হয়। পরদিন বুধবার দুপুরে মীমাংসা করার কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেন মহিন। তারপর কয়েকজন মিলে তাকে হত্যা করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ওই দিন খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। অভিযুক্তরা সবাই শনাক্ত। র‌্যাব-পুলিশ এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।

হত্যার নেপথ্যের কারণ কী- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানা গেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে মিটফোর্ড রোডে গিয়ে দেখা যায়, রোডের একপাশের ৪ নম্বর রজনী বোস লেনের ভাঙারিপট্টি। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সব দোকানই বন্ধ। গলির মাঝখানে ডান পাশেই সোহানা মেটাল নামের একটি দোকান। সেই দোকানের মালিক সোহাগ। তার কয়েকশ গজ দূরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটক। ফটকের ভেতরে কয়েক মিটার দূরেই তাকে মারধর করে অচেতন করা হয়। এরপর সেখানে ইট-পাথর মেরে মৃত্যু নিশ্চত করা হয়। সেখান থেকে টেনে রাস্তায় নিয়ে আসেন হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোহাগকে গলির ওই দিক থেকেই মারধর শুরু করা হয়। মারতে মারতে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের ভেতরে নেওয়া হয়। সোহাগ বাঁচার অনেক চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে হামলাকারীরা।

এ ঘটনায় ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম।

আসামিদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিন (২২) ছাড়াও রয়েছে- সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা গুরুত্ব দিয়ে মামলাটির তদন্ত করছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আসামিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

এম কন্ঠ/এস

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © mithapukurerkantho.com