স্টাফ রিপোর্টারঃ
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক নার্সের সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ওই নার্সের নিয়ন্ত্রণাধীন সিন্ডিকেটটি কয়েকবছর ধরে স্বাস্থ্যসেবাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছেন। তারপরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ওই নার্স সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
এবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনকে ফুসলিয়ে নিজ বাসায় নিয়ে গিয়ে এক প্রসূতির ডেলিভারিতে মৃত্যু হয়েছে নবজাতকের। এতে ওই দম্পতির স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। পৃথিবীর বুকে শিশুটি আসলো ঠিকি কিন্তু নার্সের লোভ আর চিকিৎসার অভাবে ঝরে গেছে একটি ফুটফুটে প্রাণ। এ ঘটনায় মিঠাপুকুরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দ্রুতই ওই নার্সের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবৈধ কার্যক্রমে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৮ টার দিকে। অভিযুক্ত ওই নার্সের নাম দুলালী বেগম। তিনি মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত আছেন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নার্স দূলালী বেগম তার নিজ বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে নবজাতকের ডেলিভারি ও অবৈধ গর্ভপাত করে আসছেন। দূলালী
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত থাকায়, তার নিজস্ব সক্রিয় দালাল চক্র রয়েছে। এই দালাল চক্র হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রভাবিত করে হাসপাতাল থেকে ৪০০ গজ দুরে দুলালীর নিজ বাসায় নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি রোগীদের স্বাস্থ্য পরিক্ষার নামে অর্থনৈতিক লেনদেন, ঝুঁকিপূর্ণ ডেলিভারি এবং অবৈধ গর্ভপাত করান। এতে বিভিন্ন সময়ে গর্ভবতী নারী এবং নবজাতকরা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সহ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বজনরা জানান, নবজাতকের মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তারা উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের আলীপুর থেকে, পরিক্ষা নীরিক্ষার জন্য মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন। সেখানে সেদিন কর্তব্যরত নার্স দুলালী বেগম ছিলেন। পরে তিনি ওই নারীর স্বামী রাজু মুন্সিকে বলেন, এক সপ্তাহ পর মাতৃকালীন প্রসব বেদনা উঠলে তার বাসায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি কোনো রকমের সিজার ছাড়াই বাচ্চা ডেলিভারি করবেন।
এদিকে একসপ্তাহ পর শনিবার সন্ধ্যায় প্রসূতির প্রসব বেদনা উঠলে স্বজনরা হাসপাতালে যান। সে সময় হাসপাতালে থাকা নার্স দুলালি বেগম নরমাল ডেলিভারির কথা বলে কৌশলে ওই প্রসূতীকে তার নিজ বাসায় নিয়ে গিয়ে সন্তান প্রসবের চেষ্টা করেন। কিন্তু চিকিৎসা জনিত ঘাটতিতে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পরে তড়িঘড়ি করে নার্স বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।
ভুক্তভোগীর স্বামী রিয়াজুল ইসলাম রাজু মুন্সি বলেন, আমি জানতাম দুলালী বেগম আগে থেকেই এসব কাজ করেন। কিন্তু আমার বাচ্চাটি মারা যাওয়ার বিষয়টি মানতে পারছি না। ওই সেবিকা বলেছিলেন হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। আমি কম টাকায় আমার বাড়িতে আপনার স্ত্রীকে নরমাল ডেলিভারি করবো।
অভিযুক্ত নার্স দুলালী বেগম বলেন, আমি হাজার হাজার বাচ্চা ডেলিভারি করি। কোনোদিন কোনো সমস্যা হয়নি। হাসপাতালে যে সকল রোগীরা ভরসা পায়না, তারাও এখানে আসে। আশেপাশের লোকজনকে বলে দেখেন, দিনে কত লোকজন আসে। কেউ কোনোদিন অভিযোগ করেনি। আর এ বিষয়টা সমাধান হয়েছে। এখানে অভিযোগের কিছু নেই।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, দুলালী বেগম একজন সিনিয়র নার্স এবং আমাদের স্টাফ। তার দায়িত্ব ডায়াবেটিস রোগীদের সেবা দেওয়া, প্রসূতিদের সেবা প্রদান করা তার কাজ নয়। উনি বাসায় এসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছেন এ বিষয়েও শুনেছি। এটা ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। যদি অভিযোগ পাই অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এম কন্ঠ/এস
Leave a Reply